সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২

স্বর্ণমালা গাঁথি বর্ণমালা দিয়ে

আমি সাধারণত শিশুদের জন্য কিছু লেখি না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন যেন মনে হচ্ছে আমার শিশুদের জন্য কিছু লেখা উচিত। একটা জাতির কাছে যেতে হলে প্রথমে শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হয়। আমি চাই, যে শিশু কেবল বর্ণমালা শিখবে সেও আমাকে জানুক। জানুক, আনন্দ লাভ ব্যতীত শিক্ষার আসলে কোনো উদ্দেশ্য নেই। আর শিশু শিক্ষার আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ ছড়া। আমি বিশ্বাস করি, ছড়া সাহিত্য মূলত টিকিয়ে রেখেছে শিশুরাই। আপনি হয়তো এই জীবনে অনেক কিছুই পড়েছেন কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো সেইসব বিষয়ের কোনটাই বা আপনার স্মরণে আছে?

আপনার হয়ে আমি হলফ করে বলতে পারি কিছু থাক বা না থাক সেই মুখে বুলি ফোটার সময়ে মায়ের কোলে বসে শোনা ছড়াগুলোর দুচার পঙক্তি আপনি এখনও অনায়াসেই বলতে পারেন। আপনি যদি কোনো কিছু মুখস্থ করেন এবং সেগুলোর নিয়মিত চর্চা না করেন একদিন আপনি ঠিকই ভুলে যাবেন কিন্তু শৈশবে আমাদের পড়া বা শোনা ছড়াগুলো আমরা কেউ মুখস্থ করেনি বরং একধরনের আনন্দ নিয়ে সেটা শিখেছি; আপনার আমার ভেতরকার এই আনন্দই সেটাকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছে! তাই শিশুদের জন্য “স্বর্ণমালা গাঁথি বর্ণমালা দিয়ে ” শিরোনামে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আশা করি, আপনার শিশুও আনন্দ পাবে তবে বিনীত অনুরোধ হলো একসঙ্গে পুরোটা শেখাতে যাবেন না। আনন্দ পেলে সে নিজেই শিখতে চাইবে; তবে ছড়াটি আপনার শিশুর সামনে পাঠ করার সময় একটু সুরে সুরে পাঠ করার চেষ্টা করবেন। মূলত আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।


ক-তে কলা 

খ-তে খড়

গ-গলা

ঘ-তে ঘর।

শিয়াল ডাকে হুয়াক্কা হুয়ো

শব্দের শুরুতে বসে না উঁয়ো (ঙ)!

শব্দের মধ্যে এবং শেষে

“বাঙালি” এবং “ব্যাঙের” বেশে

(ঙ) উঁয়ো বসে হেসে হেসে।


চ-তে চাবি

ছ-তে ছড়া

জ-তে জল আর

ঝ-তে ঝরা।

সবার কাছে বলে দিয়ো

শব্দের শুরুতে বসে না ইঁয়ো (ঞ)!

কোথায় বসে দেখতে চাই–

এই যে দেখো “মিঞা” ভাই!


ট-তে যে হয় টাকা

ঠ-তে ঠান্ডা

ড-তে ডান্ডা

ঢ-তে হলো ঢাকা।

মূর্ধন্য ণ- বলছে হেঁকে 

মধ্যে এবং শেষে রেখে

“ভণিতা” আপু “বর্ণ” শেখে!

শব্দের শুরুতে বসতে হলে

“ণিজন্ত” ভাই নেয় যে কোলে! 


ত-তে তালা

থ-তে থালা

দ-তে দাদা

ধ-তে ধান

ন-তে নদী, নৌযান!


প-তে পাখি

ফ-তে ফুল

ব-তে বাংলা

ভ-তে ভুল।

ম-তে “মা” হয় দেখতে বেশ

বর্গীয় বর্ণ হলো শেষ!


য-তে যেমন, য-তে যশ

র-তে রাজা, র-তে রস

ল-তে যে হয় লাল

তালব্য শ-তে শাল!

মূর্ধন্য ষ- ভীষণ বেজার

তেড়েহেঁকে আসছে যে “ষাঁড়”।

দন্ত্য স-তে সাথী 

হ-তে যে হয় হাতি!


এরপরের বর্ণগুলো

যেন সবাই পথের ধুলো 

সবাই বসে মধ্যে, শেষে

কেউবা বসে মাথায় এসে!

কে যে কোথায় বসে আর?

চলো দেখি ব্যবহার–

ডয় বিন্দু ড়-তে “গাড়ি”

ঢয় বিন্দু ঢ়-তে “মাঢ়ি”

অন্তঃস্থ অ (য়)-তে “ময়না” 

“দোয়েল” এবং “টিয়া” সব!

খণ্ড ত (ৎ)-তো ভীষণ খুশি

উনি করেন “উৎসব”।


(ং) অনুস্বারে-কিংবদন্তি 

(ঃ) বিসর্গটার “দুঃখ” তাই

“চাঁদ” মামার মাথার ওপর

( ঁ ) চন্দ্রবিন্দু দেখতে পাই।


তৌফিক ওমর

১৮ জুলাই, ২০২২।

শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২

আমি গোটা পরীক্ষা পদ্ধতির বিলোপ চাই; আমি বিশ্বাস করি, সততার চেয়ে বড় কোনো দক্ষতা নেই।

 আমি গোটা পরীক্ষা পদ্ধতির বিলোপ চাই; আমি বিশ্বাস করি, সততার চেয়ে বড় কোনো দক্ষতা নেই। 


একজন মানুষকে আপনি চাইলেই সাময়িক প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েকটা ভাষায় দক্ষ করে তুলতে পারেন অথবা পারেন কম্পিউটারের যাবতীয় সব শিখিয়ে নিতে আরও কত কত কিছুই করতে পারেন নিমেষেই কিন্তু মানুষটি যদি সৎ না হয় তবে তাঁর যাবতীয় দক্ষতা দিয়ে দ্রুত কর্ম সম্পাদন করা যাবে ঠিকই তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হবে অপকর্ম! সুতরাং আমাদের প্রয়োজন সৎ মানুষের। আর আমাদের মনে রাখতে হবে চাইলেই সৎ মানুষ গড়ে তোলা যায় না! সেজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।

শ্রদ্ধেয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের একটা বক্তৃতায় শুনেছিলাম– “পানির অপর নাম জীবন নয় বরং বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন; আমাদের প্রয়োজন শিক্ষার তবে সেটা অবশ্যই সুশিক্ষা হতে হবে!”

আমি মনে করি, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সম্ভব নয়। আর সুশিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে মানসিক উন্নয়ন অসম্ভব! একটা রাষ্ট্রের নাগরিকগণ বা একটা জাতি যখন মানসিকভাবে উন্নত হয় তখন আর কোনো দিকেই সে অনুন্নত থাকে না! শত চেষ্টায়ও তাদের দাবায়ে রাখা যায় না। উদাহরণ হিসেবে অনেক দেশ বা জাতির নামই উল্লেখ করা যায় কিন্তু সে প্রসঙ্গে আমি যাচ্ছি না!


আসলে যেজন্য আমার মতো নগণ্য মানুষের এতগুলো কথা বলা– আমি ভীষণ স্বপ্নবাজ মানুষ। আমার অনেক অনেক স্বপ্নের মধ্যে একটা স্বপ্ন হলো একটা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা থাকবে না। এখানে মনুষ্যত্বের চর্চা করা হবে। শৈশবে শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। আজ আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা অনেক। তবে এদের একটা বৃহৎ অংশ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশের ঘটেছে নৈতিক স্খলন। আর আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা আর পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে এই নৈতিক স্খলন দূর করা এবং মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা সম্ভব নয়। শৈশবে বা কৈশোরে যদি শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে সেই শিক্ষার্থীর পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এজন্য বিদ্যালয়ের থেকেও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে তার পরিবারকে। কারণ পরিবারই শিশুর প্রথম বিদ্যালয়।প্রয়োজনে অভিভাবকদের জন্যও বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাসের আয়োজন করা যেতে পারে।


অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিলে কীসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা একশ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে?

যতক্ষণ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে থাকবে ততক্ষণই তারা একটা পরীক্ষার মধ্যে থাকবে তবে এই পরীক্ষা আমাদের বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষার মতো হবে না যা কেবল শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে!

প্রতিটা শিক্ষার্থী কী করছে? একে-অপরের সাথে তাদের আচরণ কেমন? বিদ্যালয়ে যথা সময়ে উপস্থিত হচ্ছে কি না? বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ নোংরা করছে কি না? কাগজের টুকরো, খাদ্য দ্রব্যের খোসা পড়ে থাকলে তা তুলে যথাযথ স্থানে ফেলছে কি না? ইত্যাদি সম্পর্কে প্রথমেই শিক্ষকরা তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবেন। পরবর্তীতে শিক্ষকরা প্রকাশ্যে এবং আড়ালে শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় সম্পর্কে তদারকি করবেন এবং এসব বিষয়ের ওপরেই অধিকাংশ নম্বর থাকবে। শিক্ষকরা প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের পারফরমেন্স অনুযায়ী নম্বর দেবেন তবে তা গোপন থাকবে। যে বিষয়ে নম্বর কম পাবেন শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সুতরাং বিদ্যালয়ে প্রতিটা মূহুর্তেই শিক্ষার্থীরা একটা নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবে। প্রয়োজনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ক্যামেরার আওতায় আনা যেতে পারে। 

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক আগের মতোই পাঠদান করাবেন, শেখানোর জন্য পড়াবেন পরীক্ষার জন্য না! তবে এজন্য কোনো ধরনের বেত্রাঘাত করা যাবে না বরং শ্রেণিকক্ষে একটা আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করবে। সেই সাথে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বছর শেষে শিক্ষকদের প্রতিদিনের দেওয়া নম্বরের যোগফল অনুযায়ী তাদের রোল নির্ধারিত হবে এবং একশ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। এতে করে আমরা কেবল ভালো ছাত্র পাব না, ভালো মানুষ পাব। আমাদের প্রয়োজনও তাই। 


আমি চাই জীবদ্দশায় এমন একটা বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যেতে। যেখানে ভালো ছাত্রের পাশাপাশি  ভালো মানুষ তৈরি হবে। জানি না, কখনও এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারব কী না! এটাও জানি না, আমার এই লেখা কারও কারও কাছে হাস্যকর কী না! তবে এটা জানি, আমি ভীষণ স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি এবং জীবদ্দশায় আমার এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাই। সর্বোপরি আমি অনেক সোনার মানুষ চাই। অনেক অনেক আলোকিত মানুষ স্বচক্ষে দেখে মরে যেতে চাই।

তৌফিক ওমর।

৭ অক্টোবর, ২০২০।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

অপ্রতিষ্ঠিত সত্য ও আমার আত্মার আন্দোলন

 আমি একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেই! বলতে পারেন এই আন্দোলনের কর্মী কারা? কবে, কখন, কোথায় এই আন্দোলন সংগঠিত হয়? এই আন্দোলনের দাবি বা বিষয়বস্তু কী? তাদের জন্য খুব সহজ উত্তর; আমি এই আন্দোলনের একমাত্র নেতা এবং জানা সত্ত্বে আমিই একমাত্র কর্মী আর এই আন্দোলন সংগঠিত হয় আমার হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে। এরপর যা কিছু লিখব সবকিছুকেই আপনি এই আন্দোলনের বিষয়বস্তু ভাবতে পারেন। সুতরাং কথা না বাড়িয়ে বরং সেদিকেই যাওয়া যাক! অন্যায়, অবিচার, জুলুম আর দশজন করেছে আমাকেও করতে হবে; করতে হয়! কারণ আমি আপনাদের সমাজে থাকি। আপনাদের সমাজ আমাকে শেখায় অপসংস্কৃতি কীভাবে লালন করতে হয়! যুগের পর যুগ ধরে অন্যায়কে কীভাবে সিন্ডিকেট করে প্রতিষ্ঠা করতে হয়! তুমি যদি এর বিপক্ষে লড়তে চাও কেউ তোমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না; বরং ইনিয়ে বিনিয়ে ওই দশজনের পক্ষেই যাবে! কেননা পরিবার থেকেই অন্যায়কে ন্যায় বলার শিক্ষা দেওয়া হয়। এই সমাজ তথাকথিত উপঢৌকন, উপহারের নামে ঘুষকে বৈধতা দেয়। আন্তরিকতার নামে জলুমকে কায়েম করে, নফলকে অবশ্যই পালনীয় ফরজের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে করে প্রাণপণ চেষ্টা। ব্যবসার নামে সুদকে করে হালাল। ছোট্ট নারী শিশুকে পুরুষতন্ত্রের তরবারির নিচে বলি দিয়ে বাল্যবিবাহকে দেয় ফরজ কাজের তকমা। সুন্নাতে খৎনা, চল্লিশা বা কুলখানির আয়োজনকে এই সমাজ বানিয়েছে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার এক অন্যতম হাতিয়ার! জন্মদিন উদযাপন কোনো কোনো ধর্ম মোতাবেক পাপ বলে জানলেও এখন না পালন করাকেই বরং পাপ মনে হয়! যৌতুক নামক কৌতুককে এই সমাজ ভিন্নভাবে জাহির করে পুরুষতান্ত্রিক জুলুমকে করেছে নতুন করে প্রতিষ্ঠা। মুখে নৈতিক মানুষকে শ্রদ্ধা আর সম্মান দেখানোর কথা বলে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী ব্যক্তিকেই কেবল দেওয়া হয় প্রাধান্য। বিয়েতে পাহাড়সম দেনমোহরের নামে আদিম বর্বর দাস-দাসী প্রথাকেই দেওয়া হয় প্রশ্রয়। মুখে বর্ণবাদ বিরোধী স্লোগান দিয়ে জীবনসঙ্গী হিসেবে সবাই খোঁজে সাদা চামড়ার নারী।

এসবকেই আপনারা সমাজ বলেন তো! এদেরকেই বলেন সমাজের ধারক। অথচ এরা ভণ্ড। এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে হৃদয় থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি বহু আগেই। কখনও পেরেছি, কখনও পারিনি আবার কখনও সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে মিলে যেতে হয়েছে এই ভণ্ডদের দলে! তবু আমার ভেতরকার এই সংগ্রাম আমৃত্যু চলবে। হয়তো এই যাত্রায় পাশে পাবো না কাউকেই বরং হারিয়ে ফেলেছি নিজের অজান্তেই একান্ত আপন বহু মানুষকে! আমার জীবন জটিল, আমার জীবনযন্ত্রণা সহ্য করে আমার সঙ্গে থেকে যাওয়াও কঠিন। তবু এই যাত্রায় যারা ছিলেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা; যারা থাকবেন তাঁদের প্রতিও আগাম কৃতজ্ঞতা। তবে কেউ না থাকলেও এই যুদ্ধ চলবে ইনশা-আল্লাহ।

আশা করি, এই আন্দোলনের বিষয়বস্তু আর আপনাদের বোঝার বাকি নেই। এখন আসি, এই আন্দোলন বা সংগ্রাম কীভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে? বা প্রতিষ্ঠা করতে আমি কী করেছি? বা আমি করেই বা কী উদ্ধার করব?

আমি যে অনেক কিছু করতে পেরেছি সেটা বলব না তবে বিগত কয়েক বছরে আমি জানা সত্ত্বে কোনো বাল্যবিবাহের আয়োজনে যাইনি, ইহজন্মে যাইনি সুন্নাতে খৎনা নামক নির্লজ্জ উদযাপনে! করিনি জানা সত্ত্বে এইসব তথাকথিত আয়োজনের খাদ্যভক্ষণ।

চল্লিশা বা কুলখানি নামক আয়োজনে হৃদয় রক্তক্ষরণ নিয়ে বহুবার যেতে হলেও মনে হয়েছে মৃতব্যক্তির মাংসই যেন খুবলে খুবলে খেয়ে এসেছি। কখনও কখনও সমবেদনা জানাতে গিয়ে দেখে এসেছি নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে কীভাবে তার জীবিত অতি নিকটাত্মীয়য়া পৃথিবীর আদিমতম বুনোউল্লাসে মেতে উঠেছে!

বোঝার পর জন্মদিন উদযাপনকে আমার মনে হয়েছে কেবল সময় এবং অর্থের অপচয়। এইসব বিষয়ে লিখলে যেমন শেষ হবে না তেমনি আমি বর্জন করলেই রাতারাতি এই সমাজ বদলে যাবে না অথবা এইসব অপসংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে না তবে এতটুকু আমি বিশ্বাস করি এবং স্বপ্ন দেখি আমি বদলে গেলে একদিন এই তথাকথিত সমাজও বদলে যাবে! সেদিন আমি হয়তো থাকব না কিন্তু পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে আমার এই মতাদর্শ কায়েম হবে, বৈষম্যহীন একটা পৃথিবী না হোক একটা অঞ্চল হবে, তাও না হোক একটা পরিবার হবে; আমি হয়তো তার ছোট্ট একটা অংশ হব।


নিজের ভেতরে একটা বিদ্রোহী সত্তা আছে। এই সত্তাকে আমি লালন করি। তাই সবশেষে আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তিটি দিয়েই শেষ করতে চাই–

“বিদ্রোহী মানে কাউকে না মানা নয়। যা বুঝি না তা মাথা উঁচু করে বুঝি না বলা।"

তাই যতদিন বেঁচে আছি, এই সংগ্রামে জিতি বা হারি মাথা উঁচু করে এতটুকু বলে যাব নির্দ্বিধায়।

তৌফিক ওমর

১৩ জুন, ২০২২।

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

ডিজি টাল আইন

 যেই ভগবান মন খারাপেও ভরবে জেলে 

যেই ভগবান গুম করে দেয় সুযোগ পেলে

যেই ভগবান কথায় কথায় চালায় গুলি

মাথা বেচে দিয়েই মোরা সেই ভগবান মাথায় তুলি!


– তৌফিক ওমর।

সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২

বেনামী

 ধরো, আমি আর নেই

আমার চিৎকার নেই

চেঁচামেচি নেই;

নেই অধিকার প্রতিষ্ঠার হুংকার!

ধরো, আমার শাসন নেই

মিথ্যে সেসব ভাষণ নেই;

নেই তেড়েহেঁকে যাওয়ার শক্তি!

ধরো, আমি ভীষণ নীরব

নেই চঞ্চলতা, আবেগের তীব্রতা 

অথবা দ্রোহের ইচ্ছা

ভালো থাকবে? তুমি কি তাতে বড্ড ভালো থাকবে?


হয়তো আমি একজন ছিলাম

হ্যাঁ, শত অভিযোগে অভিযুক্তদের একজন ছিলাম

অথবা কিছুই ছিলাম না!

ভীষণ নগণ্য মনে হয় নিজেকে

তাই এখন এসব জঘন্য শব্দের প্রয়োগ আমি অনায়াসেই করতে পারি!

নিজেকে নগণ্য এবং জঘন্য ভাবার মতো সব প্রমাণই এখন স্পষ্ট দৃশ্যমান! 

এসব প্রমাণের যতগুলো নথি মজুদ আছে তাঁর অধিকাংশই তোমার স্মৃতিতে!


এখন যদি ভালোবাসার কথাও বলি

যদি ভালোলাগার কথাও বলি

তবুও হয়তো তুমি দ্বিধান্বিত হও;

ভাবো, এ কোনো দিকভ্রান্ত পথিকের মন!

এসবের জন্যই হয়তো আমার এতদিন বেঁচে থাকার পণ!


বেনামী

তৌফিক ওমর

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।

সংলাপ

 : বাপ নাই!

: ছ্যাড়া এতিম!

: বাপ তো আর পয়দা করতে পারুম না!

: ছ্যাড়া ভালা না, মুখে মুখে তর্ক করে; বেয়াদ্দব!

: বাপ মইরা যাওনের পর কেউ তো আর আদব শিখায় নাই; কইত্তে শিখমু!

: বেশি কতা কয় ছ্যাড়া...

: না কইলে তো বাপের লগে মোরাও মইরা যাইতাম!

: বাপ মইরা যাওনের পর বহু মাইনসে বাপ হওয়ার ভণিতা কইরছে কিন্তু হ্যারা আসলে কইরতো হুকুমজারি! 

: হুকুমের বরখেলাপ ওইলেই হ্যারা গোস্বা কইরতো!

: মায় মাতারি মানু; মাতারি মাইনসের ভাতারই যদি না থাহে তয় হ্যার কতা আর কানে লয় কেডা!

: তুই ছ্যাড়া এট্টুহানি বান্দর বেশি কতা হিক্কা গেছো!


তৌফিক ওমর

১৯ মার্চ, ২০২২।

(একটু সংলাপ লেখার চেষ্টা)

স্বর্ণমালা গাঁথি বর্ণমালা দিয়ে

আমি সাধারণত শিশুদের জন্য কিছু লেখি না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন যেন মনে হচ্ছে আমার শিশুদের জন্য কিছু লেখা উচিত। একটা জাতির কাছে যেতে হলে প্রথ...