আমি গোটা পরীক্ষা পদ্ধতির বিলোপ চাই; আমি বিশ্বাস করি, সততার চেয়ে বড় কোনো দক্ষতা নেই।
একজন মানুষকে আপনি চাইলেই সাময়িক প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েকটা ভাষায় দক্ষ করে তুলতে পারেন অথবা পারেন কম্পিউটারের যাবতীয় সব শিখিয়ে নিতে আরও কত কত কিছুই করতে পারেন নিমেষেই কিন্তু মানুষটি যদি সৎ না হয় তবে তাঁর যাবতীয় দক্ষতা দিয়ে দ্রুত কর্ম সম্পাদন করা যাবে ঠিকই তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হবে অপকর্ম! সুতরাং আমাদের প্রয়োজন সৎ মানুষের। আর আমাদের মনে রাখতে হবে চাইলেই সৎ মানুষ গড়ে তোলা যায় না! সেজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।
শ্রদ্ধেয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের একটা বক্তৃতায় শুনেছিলাম– “পানির অপর নাম জীবন নয় বরং বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন; আমাদের প্রয়োজন শিক্ষার তবে সেটা অবশ্যই সুশিক্ষা হতে হবে!”
আমি মনে করি, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সম্ভব নয়। আর সুশিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে মানসিক উন্নয়ন অসম্ভব! একটা রাষ্ট্রের নাগরিকগণ বা একটা জাতি যখন মানসিকভাবে উন্নত হয় তখন আর কোনো দিকেই সে অনুন্নত থাকে না! শত চেষ্টায়ও তাদের দাবায়ে রাখা যায় না। উদাহরণ হিসেবে অনেক দেশ বা জাতির নামই উল্লেখ করা যায় কিন্তু সে প্রসঙ্গে আমি যাচ্ছি না!
আসলে যেজন্য আমার মতো নগণ্য মানুষের এতগুলো কথা বলা– আমি ভীষণ স্বপ্নবাজ মানুষ। আমার অনেক অনেক স্বপ্নের মধ্যে একটা স্বপ্ন হলো একটা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা থাকবে না। এখানে মনুষ্যত্বের চর্চা করা হবে। শৈশবে শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। আজ আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা অনেক। তবে এদের একটা বৃহৎ অংশ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশের ঘটেছে নৈতিক স্খলন। আর আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা আর পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে এই নৈতিক স্খলন দূর করা এবং মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা সম্ভব নয়। শৈশবে বা কৈশোরে যদি শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে সেই শিক্ষার্থীর পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এজন্য বিদ্যালয়ের থেকেও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে তার পরিবারকে। কারণ পরিবারই শিশুর প্রথম বিদ্যালয়।প্রয়োজনে অভিভাবকদের জন্যও বিদ্যালয়ে বিশেষ ক্লাসের আয়োজন করা যেতে পারে।
অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে পরীক্ষা পদ্ধতি বাদ দিলে কীসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা একশ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে?
যতক্ষণ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে থাকবে ততক্ষণই তারা একটা পরীক্ষার মধ্যে থাকবে তবে এই পরীক্ষা আমাদের বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষার মতো হবে না যা কেবল শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে!
প্রতিটা শিক্ষার্থী কী করছে? একে-অপরের সাথে তাদের আচরণ কেমন? বিদ্যালয়ে যথা সময়ে উপস্থিত হচ্ছে কি না? বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ নোংরা করছে কি না? কাগজের টুকরো, খাদ্য দ্রব্যের খোসা পড়ে থাকলে তা তুলে যথাযথ স্থানে ফেলছে কি না? ইত্যাদি সম্পর্কে প্রথমেই শিক্ষকরা তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবেন। পরবর্তীতে শিক্ষকরা প্রকাশ্যে এবং আড়ালে শিক্ষার্থীদের এসব বিষয় সম্পর্কে তদারকি করবেন এবং এসব বিষয়ের ওপরেই অধিকাংশ নম্বর থাকবে। শিক্ষকরা প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের পারফরমেন্স অনুযায়ী নম্বর দেবেন তবে তা গোপন থাকবে। যে বিষয়ে নম্বর কম পাবেন শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সুতরাং বিদ্যালয়ে প্রতিটা মূহুর্তেই শিক্ষার্থীরা একটা নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবে। প্রয়োজনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ক্যামেরার আওতায় আনা যেতে পারে।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক আগের মতোই পাঠদান করাবেন, শেখানোর জন্য পড়াবেন পরীক্ষার জন্য না! তবে এজন্য কোনো ধরনের বেত্রাঘাত করা যাবে না বরং শ্রেণিকক্ষে একটা আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করবে। সেই সাথে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বছর শেষে শিক্ষকদের প্রতিদিনের দেওয়া নম্বরের যোগফল অনুযায়ী তাদের রোল নির্ধারিত হবে এবং একশ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। এতে করে আমরা কেবল ভালো ছাত্র পাব না, ভালো মানুষ পাব। আমাদের প্রয়োজনও তাই।
আমি চাই জীবদ্দশায় এমন একটা বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যেতে। যেখানে ভালো ছাত্রের পাশাপাশি ভালো মানুষ তৈরি হবে। জানি না, কখনও এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারব কী না! এটাও জানি না, আমার এই লেখা কারও কারও কাছে হাস্যকর কী না! তবে এটা জানি, আমি ভীষণ স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি এবং জীবদ্দশায় আমার এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাই। সর্বোপরি আমি অনেক সোনার মানুষ চাই। অনেক অনেক আলোকিত মানুষ স্বচক্ষে দেখে মরে যেতে চাই।
তৌফিক ওমর।
৭ অক্টোবর, ২০২০।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন