মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২

অপ্রতিষ্ঠিত সত্য ও আমার আত্মার আন্দোলন

 আমি একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেই! বলতে পারেন এই আন্দোলনের কর্মী কারা? কবে, কখন, কোথায় এই আন্দোলন সংগঠিত হয়? এই আন্দোলনের দাবি বা বিষয়বস্তু কী? তাদের জন্য খুব সহজ উত্তর; আমি এই আন্দোলনের একমাত্র নেতা এবং জানা সত্ত্বে আমিই একমাত্র কর্মী আর এই আন্দোলন সংগঠিত হয় আমার হৃদয়ে ও মস্তিষ্কে। এরপর যা কিছু লিখব সবকিছুকেই আপনি এই আন্দোলনের বিষয়বস্তু ভাবতে পারেন। সুতরাং কথা না বাড়িয়ে বরং সেদিকেই যাওয়া যাক! অন্যায়, অবিচার, জুলুম আর দশজন করেছে আমাকেও করতে হবে; করতে হয়! কারণ আমি আপনাদের সমাজে থাকি। আপনাদের সমাজ আমাকে শেখায় অপসংস্কৃতি কীভাবে লালন করতে হয়! যুগের পর যুগ ধরে অন্যায়কে কীভাবে সিন্ডিকেট করে প্রতিষ্ঠা করতে হয়! তুমি যদি এর বিপক্ষে লড়তে চাও কেউ তোমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না; বরং ইনিয়ে বিনিয়ে ওই দশজনের পক্ষেই যাবে! কেননা পরিবার থেকেই অন্যায়কে ন্যায় বলার শিক্ষা দেওয়া হয়। এই সমাজ তথাকথিত উপঢৌকন, উপহারের নামে ঘুষকে বৈধতা দেয়। আন্তরিকতার নামে জলুমকে কায়েম করে, নফলকে অবশ্যই পালনীয় ফরজের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে করে প্রাণপণ চেষ্টা। ব্যবসার নামে সুদকে করে হালাল। ছোট্ট নারী শিশুকে পুরুষতন্ত্রের তরবারির নিচে বলি দিয়ে বাল্যবিবাহকে দেয় ফরজ কাজের তকমা। সুন্নাতে খৎনা, চল্লিশা বা কুলখানির আয়োজনকে এই সমাজ বানিয়েছে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার এক অন্যতম হাতিয়ার! জন্মদিন উদযাপন কোনো কোনো ধর্ম মোতাবেক পাপ বলে জানলেও এখন না পালন করাকেই বরং পাপ মনে হয়! যৌতুক নামক কৌতুককে এই সমাজ ভিন্নভাবে জাহির করে পুরুষতান্ত্রিক জুলুমকে করেছে নতুন করে প্রতিষ্ঠা। মুখে নৈতিক মানুষকে শ্রদ্ধা আর সম্মান দেখানোর কথা বলে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী ব্যক্তিকেই কেবল দেওয়া হয় প্রাধান্য। বিয়েতে পাহাড়সম দেনমোহরের নামে আদিম বর্বর দাস-দাসী প্রথাকেই দেওয়া হয় প্রশ্রয়। মুখে বর্ণবাদ বিরোধী স্লোগান দিয়ে জীবনসঙ্গী হিসেবে সবাই খোঁজে সাদা চামড়ার নারী।

এসবকেই আপনারা সমাজ বলেন তো! এদেরকেই বলেন সমাজের ধারক। অথচ এরা ভণ্ড। এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে হৃদয় থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি বহু আগেই। কখনও পেরেছি, কখনও পারিনি আবার কখনও সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে মিলে যেতে হয়েছে এই ভণ্ডদের দলে! তবু আমার ভেতরকার এই সংগ্রাম আমৃত্যু চলবে। হয়তো এই যাত্রায় পাশে পাবো না কাউকেই বরং হারিয়ে ফেলেছি নিজের অজান্তেই একান্ত আপন বহু মানুষকে! আমার জীবন জটিল, আমার জীবনযন্ত্রণা সহ্য করে আমার সঙ্গে থেকে যাওয়াও কঠিন। তবু এই যাত্রায় যারা ছিলেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা; যারা থাকবেন তাঁদের প্রতিও আগাম কৃতজ্ঞতা। তবে কেউ না থাকলেও এই যুদ্ধ চলবে ইনশা-আল্লাহ।

আশা করি, এই আন্দোলনের বিষয়বস্তু আর আপনাদের বোঝার বাকি নেই। এখন আসি, এই আন্দোলন বা সংগ্রাম কীভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে? বা প্রতিষ্ঠা করতে আমি কী করেছি? বা আমি করেই বা কী উদ্ধার করব?

আমি যে অনেক কিছু করতে পেরেছি সেটা বলব না তবে বিগত কয়েক বছরে আমি জানা সত্ত্বে কোনো বাল্যবিবাহের আয়োজনে যাইনি, ইহজন্মে যাইনি সুন্নাতে খৎনা নামক নির্লজ্জ উদযাপনে! করিনি জানা সত্ত্বে এইসব তথাকথিত আয়োজনের খাদ্যভক্ষণ।

চল্লিশা বা কুলখানি নামক আয়োজনে হৃদয় রক্তক্ষরণ নিয়ে বহুবার যেতে হলেও মনে হয়েছে মৃতব্যক্তির মাংসই যেন খুবলে খুবলে খেয়ে এসেছি। কখনও কখনও সমবেদনা জানাতে গিয়ে দেখে এসেছি নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে কীভাবে তার জীবিত অতি নিকটাত্মীয়য়া পৃথিবীর আদিমতম বুনোউল্লাসে মেতে উঠেছে!

বোঝার পর জন্মদিন উদযাপনকে আমার মনে হয়েছে কেবল সময় এবং অর্থের অপচয়। এইসব বিষয়ে লিখলে যেমন শেষ হবে না তেমনি আমি বর্জন করলেই রাতারাতি এই সমাজ বদলে যাবে না অথবা এইসব অপসংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে না তবে এতটুকু আমি বিশ্বাস করি এবং স্বপ্ন দেখি আমি বদলে গেলে একদিন এই তথাকথিত সমাজও বদলে যাবে! সেদিন আমি হয়তো থাকব না কিন্তু পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে আমার এই মতাদর্শ কায়েম হবে, বৈষম্যহীন একটা পৃথিবী না হোক একটা অঞ্চল হবে, তাও না হোক একটা পরিবার হবে; আমি হয়তো তার ছোট্ট একটা অংশ হব।


নিজের ভেতরে একটা বিদ্রোহী সত্তা আছে। এই সত্তাকে আমি লালন করি। তাই সবশেষে আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তিটি দিয়েই শেষ করতে চাই–

“বিদ্রোহী মানে কাউকে না মানা নয়। যা বুঝি না তা মাথা উঁচু করে বুঝি না বলা।"

তাই যতদিন বেঁচে আছি, এই সংগ্রামে জিতি বা হারি মাথা উঁচু করে এতটুকু বলে যাব নির্দ্বিধায়।

তৌফিক ওমর

১৩ জুন, ২০২২।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বর্ণমালা গাঁথি বর্ণমালা দিয়ে

আমি সাধারণত শিশুদের জন্য কিছু লেখি না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন যেন মনে হচ্ছে আমার শিশুদের জন্য কিছু লেখা উচিত। একটা জাতির কাছে যেতে হলে প্রথ...